রাতের আঁধারে স্কুলের মালামাল বিক্রি করে দিলেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক - sonargaoncrimenews

Breaking

Home Top Ad

 


Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫

রাতের আঁধারে স্কুলের মালামাল বিক্রি করে দিলেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক



সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মালামাল ভর্তি তিনটি পিক-আপ ভ্যান আটক করে স্থানীয় এলাকাবাসী। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লার জিম্মায় জব্দকৃত মালামাল রেখে আসে।


রোববার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পুরোনো বেঞ্চ, ফ্যান ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম দপ্তরি সুমন দাসের মাধ্যমে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মহসীনের কাছে বিক্রি করেন। পরে মহসীন রাতের অন্ধকারে তিনটি পিক-আপ ভ্যানে মালামাল তুলতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে মহসীন পালিয়ে যায়।


এ সময় স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. বাতেন মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষককে দেখতে পান। বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতে মালামাল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা জানান, ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং বাকিতে বিক্রি করায় রশিদ দেওয়া হয়নি।


ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা তৌকির আহমেদ ও সাহেদ হাসান বলেন, “বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়কে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছে। রাতের অন্ধকারে পিক-আপ ভর্তি করে মালামাল নেওয়ার সময় আমরা বাধা দিলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এখন তারা ভুয়া রশিদ তৈরি করে ঘটনাকে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”


বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, “নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরোনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং বিক্রিত মালামালের রশিদ রয়েছে। এরই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালামাল বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়নি।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সভাপতির নির্দেশেই মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির রশিদ আমাদের কাছে রয়েছে, আমি কুমিল্লায় থাকায় তখন দিতে পারিনি। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি, এটা স্বীকার করছি।”


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়মভঙ্গ হয়েছে। তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। বর্তমানে মালামাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।”


স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে এমন অনিয়ম আর না ঘটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages